আজকাল শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই নিঃসন্দেহে। কিন্তু স্বশিক্ষিত মানুষের আজ
বড়ই অভাব। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষার অবস্থা নিয়ে একটি পোস্ট
লিখেছিলাম। সেই পোস্টে শেষ করতে পারিনি আমার সব অভিব্যক্তি। আজও হয়ত পারব
না আমার জমে থাকা কথাগুলো সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে। তবে থেমে থাকলে তো চলবেনা।
একটি পোস্টের পর একটি পোস্টে লিখে যাব আমার দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হাজারো
কথা।
আজ এই পোস্টে কথা বলব স্বশিক্ষিত এবং শিক্ষিত ব্যক্তির উপর আমার জমানো
গবেষণা নিয়ে। আপনারা কি শিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত শব্দের মানে জানেন? অনেকেই
জানেন, কেউ হয়ত কম জানেন, আবার কেউ বা যেটা জানেন সেটা সঠিক নয়। যাই হোক
আমি আমার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এবং অপ্রয়োজনীয় সব কথাগুলো
আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আমি নিজেও জানিনা যে, আমার কথাগুলো ঠিক কি না ।
তাই আগেই বলে রাখছি এই পোস্ট সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব দৃষ্টিকোন থেকে লেখা।
যেকোন ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমরা সবাই নাকি পড়াশুনা করছি শিক্ষিত হওয়ার জন্য। কথাটা ঠিকই। কিন্তু আমার
মতে শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে স্বশিক্ষিত হওয়াটি বেশি জরুরী। শিক্ষিত এবং
স্বশিক্ষিত শব্দ দুটি একই মনে হলেও আসলে এর মাঝে এক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য
রয়ে গেছে। পড়াশুনা করে শিক্ষিত হওয়া যায়। কিন্তু পড়াশুনা করে
সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত না হয়ে সার্টিফিকেট বিহীন স্বশিক্ষিত হওয়া অধিক
শ্রেয়। অনেকেই শিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত শব্দ দুটির মাঝে পার্থক্য খুঁজতে
গিয়ে ইতিমধ্যে জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। আমি সেটাই ভাবছি এবং আপনাদেরকে
কিভাবে বুঝাব সেই সংজ্ঞাই খুঁজে পাচ্ছি না। একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর
চেষ্টা করব। আজকে আমি নিজে শিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত এর মানে বুঝতে পেরেও
সংজ্ঞা তৈরি করতে পারছিনা। তবে একটি উদাহরণ দাঁড় করিয়ে ফেলেছি। আশা করি এই
উদাহরণই আপনার বুঝার ঔষধ হবে। দেখি চেষ্টা করে উদাহরণটা আপনাদেরকে বুঝাতে
পারি কি নাঃ-
ধরুন, ব্লগার মারুফ ছোটবেলা থেকে পড়াশুনা করছে। সে খুব ভালো মুখস্ত করতে
পারে। তাঁর টার্গেট ছোটবেলা থেকেই যে সব পরীক্ষায় তাকে ফার্স্ট হতে হবে।
তাঁর প্রতি ধ্যানে জ্ঞানে ফার্স্ট হওয়ার কথা ঘুরত। যথারীতি সে ভালো ফলাফল
করেও। প্রতি পরীক্ষার আগে সে মনোযোগ দিয়ে পড়ে, মুখস্ত করে। পরীক্ষায় সে
গাইড বইয়ে পড়া মুখস্ত উত্তর খুব সুন্দরভাবে লিখে। তাঁর ফল হিসেবে সে সব
পরীক্ষাতেই কখনও ফার্স্ট, কখনও সেকেন্ড আর কখনও থার্ড হয়। একসময় সে বড় বড়
পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করল। বড় বড় স্যারদের তৈরি সাজেশন, গাইড বই পড়ে সে
সেই পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পায়। এভাবেই চলতে থাকে ব্লগার মারুফের
সাফল্যময় জীবন। এখন সে দেশের বড় পদে চাকুরি করছে। তবে তাঁর নেতিবাচক
গুনগুলো হলঃ সে এখন গরীবদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে অনীহা প্রকাশ করে,
বাবা-মা -কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখেছে, অর্থের পাহাড়ে সে এখন ন্যায়-অন্যায় বুঝতে
পারেনা। গল্প শেষ!
এবার আসি গল্পের বিশ্লেষণে। এই যে গল্পের নায়ক ব্লগার মারুফ আজ বড় পদে
চাকুরি করছে। আমরা একেই সাধারণত শিক্ষিত ব্যক্তি বলে থাকি। অর্থাৎ কেউ তাঁর
জীবনের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় পাস করলেই তাকে আমরা শিক্ষিত
বলি। আসলেই কি তাই? হ্যাঁ, সেটাই তো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষিত শব্দটির
মানে আসলে এটাই হয়ে গেছে। কেউ পরীক্ষায় পাস করে বড় হলে তাকেই আমরা শিক্ষিত
নামের উপাধি দিয়ে দেই। আচ্ছা মেনে নিলাম সে কথাও। কিন্তু স্বশিক্ষিত
শব্দটির মানে সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত ব্যক্তি নয়। স্বশিক্ষিত ব্যক্তির
মাঝে জ্ঞান থাকতে হবে। আমরা ভালোভাবেই জানি, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল
জ্ঞান অর্জন করা। কিন্তু আমরা সেই উদ্দেশ্যকে বেছে না নিয়ে অযৌক্তিক নানা
উদ্দেশ্যে শিক্ষা নিচ্ছি। পড়াশুনা করে কিছু যদি নাই শিখি, কিছু জ্ঞান যদি
আমার ভিতরে সংরক্ষণ না করি। তবে সে শিক্ষা আপনাদের কাছে মানিক রতন হতে
পারে। কিন্তু আমার কাছে সেই শিক্ষার দাম নেই। উপরের গল্পে মারুফ বিভিন্ন
উপায়ে ঠিকই সার্টিফিকেটধারী একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হয়েছে। কিন্তু সে কি
স্বশিক্ষিত হতে পেরেছে? অবশ্যই নয়। কারণগুলো গল্পের শেষ বাক্যগুলোতে রয়েছে।
অথচ সে একদিন তাঁর বইয়ে অসংখ্যবার বাবা-মার প্রতি ভালো আচরণ,
সম্মান-শ্রদ্ধা, গরীবদেরকে সাহায্য করা, দুর্নীতি থেকে বিরত থাকার কথা
পড়েছে। হুম, তাহলে তাঁর আজ এই অবস্থা কেন? এটাই হল শিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত
ব্যক্তির পার্থক্য। ব্লগার মারুফ ঠিকই এসব ব্যাপার বইয়ে পড়েছে, পরীক্ষার
খাতায় লিখে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। কিন্তু সে পড়েছে শুধুমাত্র পরীক্ষায়
লেখার স্বার্থ নিয়ে। সে কখনই হয়ত সেটা বুঝার চেষ্টা করেনি। বাংলাদেশে আজ
অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে সার্টিফিকেট এর জন্য। তাদের কোন দোষ নেই।
সময়ই এই করুণ পরিনতির জন্য দায়ী। সার্টিফিকেট অর্জনের নেশায় শিক্ষার্থীরা
আজ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে ছুটছে, সাজেশন খুঁজছে, মুখস্ত করছে। কারণ
তাদের একটাই লক্ষ্য "পরীক্ষায় পাস/ভালো ফলাফল করতে হবে।" ফলে সেই নেশায়
শিক্ষার্থীরা নাক-কান বুজে পড়েই যাচ্ছে। তাদের মাঝে বিন্দু মাত্র বাস্তবিক
শিক্ষা ঢুকছে কিনা সন্দেহ থেকে যায়। যে বই পড়বে নিজের ভালোবাসায়-আগ্রহে, সে
তো স্বভাবতই বেশি জানবে এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে। শুধুমাত্র পরীক্ষার
জন্য পড়তে হবে কেন? ধরুন, আপনি ছোটবেলা বইয়ে শিখেছেন "বয়স" নির্ণয় করা।
ভালো কথা। পরীক্ষায় সেগুলো প্রয়োগ করে ভালো ফলাফলও করেছেন। অথচ আজ বড় হয়ে
হটাত নিজের প্রয়োজনে নিজের বয়স নির্ণয় করাটাই যদি না জানেন তবে সেই শিক্ষার
কি অর্জন হল?
Post a Comment